শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

নরওয়েজিয়ান উড

 বইঃ নরওয়েজিয়ান উড

লেখকঃ হারুকি মুকারামি

অনুবাদকঃ আলভী আহমেদ


প্লট রিভিউঃ উপন্যাসটি বিশেষভাবে তাদের জন্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯, ১৯ শেষ হলে আবারও ১৮তে ফিরে যায়।

উপন্যাসের মূল চরিত্র ওয়াতানাবে এর হাইস্কুল বন্ধু বলতে ছিল মাত্র দুইজন। কিজুকি আর কিজুকির গার্লফ্রেন্ড নাওকো। কিজুকি অজ্ঞাত কারণ বশত (আমিও ভেবে চলেছি কারণটি কী) আত্মহত্যা করে। এর এক বছর পর একলা নাওকোর সাথে একদিন টোকিওতে দেখা হওয়ার পর তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। লক্ষ্যণীয় উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে নাওকোর প্রিয় গান নরওয়েজিয়ান উডের সাথে মিল রেখে। নাওকোর সেই মানসিক আঘাতটা ধীরে ধীরে মানসিক ব্যধিতে পরিণত হয়। স্যানেটেরিয়ামে যেতে হয় নাওকোকে। দূরত্ব বেড়ে যায়, শূণ্য স্থান তৈরি হয়। আর এই শূণ্য স্থানে আসে মিদোরি। নাওকোর শান্ত, ধীর, ভাবুক চেতনাধারার ঠিক উল্টো প্রবাহে মিদোরি আসে উপন্যাসে; প্রাণ সঞ্চার করবার জন্য। মূলত এই তিন জনকে নিয়ে উপন্যাসটি হলেও উপন্যাসটি শুধুমাত্র তিন জনের আশে পাশেই ঘুরপাক খায়নি। সুযোগ পেলেই লেখক পাঠকদের ঘুরে নিয়ে এসেছেন অন্য উপগল্পে। হারুকি মুকারামি এই উপন্যাসে মাধ্যমে হয়তবা প্রেমের পুরাতন সঙ্গাই নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়ে গেছেন। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে করে তুলেছন আরও প্রেমময় আরও পরিশীলিত।


এবার আসি বাংলা অনুবাদ আর অনুবাদকের কাছে। বইটি অনুবাদ করেছেন আমার প্রিয়ভাবে পরিচিত এক মানুষ, আলভী আহমেদ, যিনি একজন শতভাগ নান্দনিক বাঙ্গালি। ভাইকে ধন্যবাদ এই অমূল্য বইটি উপহার দেওয়ার জন্য। 

আমার জানা মতে, হারুমি মুকারামি একজন সাবলীল লেখক আর ভাষা সমুদ্রের পানির মতো স্বচ্ছ হলেও সমুদ্রের মতো গভীর। তার লেখনী জনপ্রিয় হয়ে ওঠার মূল কারণই হয়তবা এই সাবলীলতা। আর হারুকি মুকারামির সেই সাবলীলতা বাংলা অক্ষরে বেঁধে এমন একটি চমৎকার অনুবাদ প্রকাশ করার পাণ্ডিত্য দেখে অনুবাদকের প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। অনুবাদে কোন প্রকার আড়ষ্টতা খুঁজে পাইনি। বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ সামর্থটুকু ব্যবহার করে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে এ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিছু অনুচ্ছেদ পড়ে মনে হয়েছে যেন বাংলা সাহিত্য পড়ছি যার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ আর চরিত্রগুলোও বাঙ্গালি এমনকি আবেগগুলোও এই বাংলার মাটি প্রসূত। সাবলীল করার উদ্দেশ্যে অনুবাদক বাংলা চলতি কিছু আবেগ প্রকাশন বাক্য সংযোজন করেছেন যা পড়ে ওয়াতানাবেকে আর মিদোরিকে টোকিওর নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্বের বিদ্যার্থী লেগেছে। যেন ওরা টোকিও শহরে টইটই করে ঘুরে বেড়ায় না, ওরা ঢাকাতে ঘোরে। ওরা শিঞ্জুকু স্টেশনে না বরং কমলাপুরে ট্রেন ধরে। আমার মনে হয়েছে চরিত্রগুলোর নাম বাঙ্গালিকরণ করলেই এটি কোন বিখ্যাত জাপানিজ উপন্যাসের অনুবাদ না বরঞ্চ বাংলা সাহিত্যের মৌলিক উপন্যাস হয়ে যেত। আমার রিভিউ পড়েই বুঝতে পারছেন আমি বইটর লেখক আর অনুবাদকের রীতিমত ভক্ত বনে গেছি। আপনিও পড়ুন; ভালো লাগতে বাধ্য।

কোন মন্তব্য নেই: