আমার নিশ্চল জানালায় সীমাহীন আকাশ পড়ে ছিল,
পড়ে ছিল শীতের প্রশান্ত রোদ্দুর।
অল্প ভেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ হতাম,
মুগ্ধ হতাম গাছের বাদামি পাতার বিচ্ছুরণ দেখে
একের পর এক,
সারির পর সারি,
গুচ্ছের পর গুচ্ছ;
এটা নিতান্তই ওদের খেলা নয় , নয় শুধু স্থানন্তর
ওরা যেন উড়ে চলে ; ঘুরে চলে
আনবে বলে যুগান্তর ।
জানালা থেকে হাত বাড়ালেই ওরা আমাকে স্পর্শ করত
বলত, শেষবেলার অতিথি পাখির গল্প।
তার আবেগে দলছুট পাখি ছানার কান্না আমার কানে বাজত ।
হয়ত লম-বা তালগাছটা তার মা’কে খুঁজে দিতো ।
যখন ফেরিওয়ালার হাক ই নয় বরং তার হৃদস্পন্দনও শোনা যায়
তখন বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিও বেরিয়ে পড়ে
কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসের খোজে
হয়তো বা তার ছোট্ট ভাইটির জন্যে একটা পুতুল কেনে
পুতুল খেলা তার বড্ড শখ
আর বড় ভাইয়ের জন্যে ?
সে মনে করে মোয়া কিনে রাখে
মা বলেছেঃ সে ইস্কুলে পড়ে , অন-নেক বুদ্ধি
নদীর ঐপারে
কতক সঙ্গী সহিত দুরন্তেরা
জেলের মাছ ধরা দেখছে,
মরা নদীর গর্ভ থেকে শেষ পানিটুক
নিঙড়িয়ে চলছে মাছ ধরার খেলা
খেলায় বাদ যায় নি খুকির বড় ভাই
বিকেল যখন আর একটু ভারী হয়ে আসে
বাতাস যখন পথের ধুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়
তখন মাঠ ওদের ডাকে।
বলেঃ “কিরে আয় , বেলা তো আর নেই”
জানি না দেখেছো কিনা
লালচে সূর্য যখন মাঠের উপর পড়ে
তখন ধানের জমিগুলোর
আ’ল সবচেয়ে ধূসর লাগে
লোকে ধূসর রঙ ওড়ায়, কাজে যায়
আবার ধূসর রঙ ওড়ায়, ঘরে ফেরে
কিন্তু সে রঙ কখনো যায় না
এটি এমন এক সীমাহীন সময় যেখানে
রাত নামলেও জীবন ফুরায় না
রাস্তার কোন এক বাঁকে এক দরিদ্রা
ভাপা বানাতে বসে
ঊফ! ধোয়া ওঠা ভাপা
কোন এক ক্লান্ত বাবা ভাপা কিনতে আসে
তার ঘরের ঘুমন্ত শিশুটির জন্যে
হয়ত কোনদিন কেউ আসে না ,
কিন্তু বুড়ি তার ছ’বছরের নাতনিকে নিয়ে
ভাপা বানাতেই থাকে , বানাতেই থাকে
যতক্ষণ না তাদের রক্তমূল্য সম পোলাও চালের
আটা আর আগুনটা আছে
কুয়াশার শুভ্রতায় কালো কুকুরটার গা যখন
মুক্তোর মতো জ্বলতে থাকে
তখন বুড়ি তার জীবনদ্বীপের প্রজ্জ্বলিত
আশা দেখতে পায়
ভাবছো, কেমন করে জানি এসব গল্প ?
আহা! এসব তো আমাদের চিরচেনা গল্প
তাকিয়ে দেখ তুমিও এক বুড়িকে পাবে-
যাকে নিয়ে লেখার মতো কয়েকটি
আঁচড় ছাড়া তুমি কিছু পাবে না।
লেখা: রুহান
২০১৮ এর কোন একদিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন