রবিবার, ১৬ মে, ২০২১

Dubito, ergo cogito, ergo sum

Each and every day, a boy comes here for his ease of mind and to erase all the bad memories of life. He watches people gossiping, passing by him. Some of them looks worried, some of them enjoys themselves beyond this earthy world. In the limitless blue, birds fly away, the sun moves towards west. After a certain time, the sun says him bye-bye. He with no friend watches these silently as if he never existed. He thinks, He writers, He reads there sitting on tender green grasses. That is the only passionate thing he has, to do in his small life. He is so ordinary by the outfit, but not by his imagination. As per his imagination he touches each and every species of this planet, goes through all mankind’s mind-set, feels the galaxy, neutron star, hear their sounds inside his soul! He remained too busy to feel those that he forgot to express to others. He wanted to but that couldn’t happen. Perhaps no one was interested or perhaps he was the guy who is not interesting.

Some random but curious ants follow him by observing him coming regularly. Actually he has been observed for ages by the ant society, living near where he comes and usually sits to be a witness of nature. There might be two reasons for ants. One, he helped them by small but vital deeds from winter, from rain, from summer & from wind. On a random day one of them gratefully exclaimed, “How compassionate this monkey is towards us.”

“Wait, it’s not a monkey! It’s a cat!”

A point of interest became created so suddenly by that debate. All of the ants gathered there. All had the same question but had different answers. Even few of them marked him as a zebra. An ultimate debate began! But the ant who said ‘It’s a cat’ was great in speaking. For obvious, that ant won the debate and rest of them used to believed that! You know what! There was a great irony. One of them guessed and said him a human! But everyone was so motivated and was not prepare to follow a new hypothesis.

Still they believe that It’s a cat! But a New dispute has risen up! “Is it HE, or SHE?”

They see him everyday, He sees them everyday! He and the ants were too close to by distance, but weren’t any close to communicate. Only they can say, “He is a humanitarian cat.”

A voice rises from rival party, “How dare you to address her he?”

Fight Continues and community continues to fall apart!

- Rownak Shahriar Ruhan

Bangladesh, 16 May, 2021


সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২১

The City of Millions

 The City of Millions

A. A. M. Rownak Shahriar Ruhan

#12001009

[This poem was published in Notre Dame College, Dhaka's Yearly (2020's) Magazine "Blue & Gold" as English Cover poem.]

I, with you ply across the city

whenever and whenever you want.

I, with you run from scorching to pouring

to stand with three for my owner

I am "Rickshaw" and this is my city.


The peace from the Almighty, I bring to you.

Blessings and the prayer hold me

Come to enter into entire

I am "Masjid" and this is my city.


I contain the legacy

the legacy of this city

From nawab to you,

With my architecture I tied the time

I am "Ahsan manjil" and this is my city.


I'm blessed with curse

Fascinating all toward me

protecting the lord from other's sword

And now became the witness of history

I am "Lalbagh's Fort" and this is my city.


I was Asia's pride

Symbol of accuracy

Uphold excellence of our artistic mind

I am "Mosleen" mother of textile

and this is my city


I trade for you, from you towards the world

Floating with thousands

and connecting all to you

I am crowded "Sadar Ghat" and this is my city.


I colored the nature

Blue to red, green to yellow

I make them "Bangali" in your eyes 

I am "Dhakai saree" and this is my city.


Authors, Readers and Literature

I hold all of three

Tribute to the language and those who love it

I read, I write, I introduce

I'm "Amor Ekushe Boi mela" and this is my city.


I am the biggest occasion of Bangalis' trace

Mixed with Padma ilish and panta

I march for Mangala, the ultimate "Kalyan"

I am "Poyla Bokshak" and this is my city.


I am Dying for you.

my life will be lucky to be sacrificed for you.

I was the lifeline and now my life is lining

I am "Buriganga" and I'm the mother of the city.


I am everything but without you, I'm nothing

I'm the manifest of the country

Shelter of millions, trade house of Asia

Yes, I'm unplanned, blocked with jam

But again that's me who got most attention, most affection

I'm the child of civilization

I was "Zahangirnagar"

and now I am "DHAKA" the city of yours.


 

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

নির্বাচন? না নীড়-বাছন? 🙄

(নির্বাচন রম্য, তাই রম্য হিসেবেই নিয়েন)

কালের চাকা ঘুরে নির্বাচনের পোস্টারে আবার শহর ছেয়ে গেছে। মাসের প্রায় পুরোটুকু জুড়েই বহু প্রচার-প্রচারণা চালালেন প্রার্থীরা, আমিও শুনলাম, দেখলাম। এই শোনা-দেখা থেকে যা উপলব্ধি হলো তা রাখ ঢাক ছাড়াই লিখছি।

(caution: informal & some sensitive, explicit contents ahead)

শুরু থেকেই শুরু করি। সাধারণ মানুষদের চেয়ে প্রার্থীর কাছে নির্বাচন দিন গণনা শুরু হয় বহু আগে থেকে। হয়তো আগের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই। এরপর দেশের বড় যে দুই দল আছে তাদের মনোনয়ন পেতে শুরু হয় ফাটাফাটি, কাটাকাটি যাকে ফর্মাল ভাষায় তোড়জোড় বলে। সবাই চান কিন্তু কেউ পান, কেউ পান না। এখন দলের মার্কা পাননি তাই বলে তো তার ইচ্ছা থেমে থাকতে পারে না তাই না!? তারাও দাঁড়িয়ে যান! দাঁড়িয়ে যায় তাদের… মার্কা। মাঝে মধ্যেই তারা নিজেদের মধ্যে শারীরিক কসরত করেন, কম্ফু প্র‍্যাকটিস করেন, বাশ দিয়ে ডাঙ্গুলি খেলেন। পরের অলিম্পিকের জন্য ৫০০ মিটার রিলে দৌড়ের প্র‍্যাকটিসও নির্বাচনেই হয়ে যায়। স্পিড (হেব্বি এনার্জি) খেয়ে তারা কিছু পুরাতন চেয়ার টেবিল ভাঙেন (নতুনের আগমনে পুরাতন আসবাবগুলো ভেঙ্গে নির্বাচনের পর পিকনিক খাওয়ার জন্য আরকি)

আপনার মন কি খুব খারাপ? আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না? নিজকে নিয়ে হতাশ হতাশ লাগে? কনফিডেন্স বাড়াতে মোটিভেশন চান? তাহলে আজই চলে আসুন…

কলিকাতা হারবালে না রে ভাই! মিছিলে মিছিলে গিয়ে যেকোন প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, জয়ের সম্ভাবনা কত? তারপর দেখেন খেলা!

সবাই বলবে, শতভাগ। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমিই জিতব।

যাকে কেউ আজীবনে চিনেও না সেও শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। এটা থেকেও না মোটিভেট হইলে আপনার জীবনটাই বৃথা! যান, আপনি গিয়ে কলিকাতা হারবালই খান!

সবার সম্ভাবনা শতভাগ! সম্ভাবনা চ্যাপ্টারটাই ইন্টারমিডিয়েট থেকে তুলে দেওয়া উচিত রে ভাই! আর আরেকটা প্রশ্ন সবাই যদি বলে 'নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমিই জিতব' তাহলে নির্বাচনটা অসুষ্ঠু করে কে?

যাই হোক এরপর ওনারা পোস্টার ছাপান, রাস্তায় লাগান, গলিতে লাগান, দেয়ালে লাগান, বিলবোর্ডে লাগান। সবখানে লাগান। লাগান আর লাগান। লাগাতে লাগাতে ভরে ফেলেন। সূর্যও ফুটা খুজে পায় না সে কই ঢুকাবে? আরে আলোক রশ্মির কথা বললাম রে ভাই! 😐

এরপর দ্বিতীয় ধাপে আসি। এই ধাপেই শুরু হয় কানের উপর অত্যাচার। মমতাজের ফাইটা যায় থেকে শুরু করে অপরাধী রে পর্যন্ত যত গান আছে, সবগুলাই চলে! দুপুরে চলে, বিকালে চলে, রাতে চলে না, দৌড়ায়। উথাল পাথাল গান, চমকে দেয় প্রাণ! অতি সুরেলা ভোজপুরী ইন্ড্রাস্ট্রির পদ্মশ্রী প্রাপ্ত কিছু গায়ক-গায়িকা আছেন তারাই এই গুরুভার নেন আরকি। এনারা সবাই প্রতিববছর গ্র‍্যামি এওয়ার্ডে নমিনেশন পান, কিন্তু একটুর জন্যেই মিস হয়ে যায় বারবার। কিছুক্ষেত্রে শোনা যায় এ. আর. রহমান নাকি এদের টিউন কপি করছিলো।

সব প্রার্থীর গানগুলো মুখস্ত হয়ে যায় বুঝলেন, কমপক্ষে ২০০-৩০০ বার তো শোনা হয়ে যায় তো। রাতে স্বপ্নেও সেগুলো বাজতে থাকে। এখন অনেকে বলবে স্বপ্ন এগুলো বাজা কি দোষ!? না রে ভাই, দোষ না, এটা তো রহমত! আল্লাহর খাস রহমত! কাল তো নির্বাচন। কালকের পর আর গান বাজবে না। খুব মিস করবো। ভাবতেই বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠলো। শহরটা কি ফাকা ফাকা - নির্জন লাগবে। ভাবেন তো একবার বসের সাথে কথা বলতেছি আর ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক নাই- ধুম মাচালে, ধুম মাচালে ধুম, ভোট দে রে ভোট দে রে ভোট্টট্ট! এই বেদনাতেই গানগুলো রেকর্ড করে রেখেছি। পরের ৫ বছর শুনবো। ডিপ্রেশন কেটে যাবে ইনশাল্লাহ!

এরপর তৃতীয় ধাপ। এই ধাপে প্রার্থী বাসায় আসেন। অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। তা সব ঠিক আছে কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? কিছুক্ষণ পর আরেক প্রার্থী আসেন, ওনার প্রতিশ্রুতিগুলোও হুবহু এক হয়। সবার প্রতিশ্রুতি এক, বাক্য এক, খালি বলার মানুষগুলা আলাদা! এমনটা তো স্কুলে হতো আমাদের। এক বেঞ্চের সবার Load Shedding প্যারাগ্রাফ লাইন টু লাইন এক, খালি হাতের লেখা আলাদা। ৪টা খাতা যখন স্যার দেখতেন তখন মার্কও আসতো ৪ রকম। কারণ? হাতের লেখা! নির্বাচনেও হয়তো আমাদের শ্রদ্ধেয় ভোটারগণ এভাবেই ভোট দিয়ে থাকবেন। মুখে যার হাসি, তাকেই ভালোবাসি।😎

চতুর্থ ধাপ নির্বাচনের দিনে আসে। উড়াধুরা বাশ কাটা হয় আগের দিন। কামাররা তো মনে হয় কোন ফুসরতই পায় না! কে জানে..

মারামারি না হলেও প্রস্তুতি থাকেই সব নির্বাচনে। মাঝে মধ্যে হয়ও। সেই লাগে দেখতে! হলিউড বলিউড ফেইল! কই যেন শুনছি জন উইক নাকি এখান থেকেই মারামারির মুভস কপি করছে। 

এরপর যে মার খেয়ে হারে তার ভাষ্যও প্রস্তর যুগ থেকে কেন জানি এক- এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বাশ পাতি মারামারির পর বেচে গেলে পিজাইটিং অফিসারের উপর হালকা চলে আরকি! কর্মীগণ পুরাতন প্যান্ট শার্ট দেখলে ছিড়ে দেন একটু। পিজাইটিং অফিসার আর পুরাতন ড্রেস পরবে, এ হতেই পারে না। কী জনদরদি প্রার্থী রে বাবা! এ সময় বীর পুলিশগণ ঘটনা স্থল থেকে সটকে পাশের দোকানে ফ্রি জিলাপি খান। ভাঙ্গচুর শেষ হলেই তারা যান এবং সাংবাদিকদের বলেন- পুলিশের আন্তরিক চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সবসময় এমন হয় না। মাঝে মাঝে পুলিশ সত্যিই প্রশংসনীয়ভাবে পরিস্থিতি সামলায়। No offence here.

দীর্ঘ মারামারি মারামারি খেলার পর যে জয়ী হয় সেই আসলে জয়ী হয়। জোর যার, ভোট তার 

তারপর শুরু হয় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা…

যেগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলো লিস্ট ধরে ধরে স্কিপ করে অন্যসব কাজ করেন কেউ কেউ (সবাই নয়, অনেকে সত্যতই আদর্শবান ও যোগ্য)। যেই লোক ভোটারদের হাতে পায়ে ধরতো, সেই লোকের হাতে পায়ে ধরেও সাহায্য পান না অনেকে। কারণ? কারণ আর কি রে ভাই!? তারা এখন গদিতে। ৫ বছর নিশ্চিন্ত! আসছে নির্বাচনে আবার যাদের হাতে পায়ে ধরবেন, এখন তারা একটু হাতে পায়ে ধরুক না, ক্ষতি কি! উনি যে ভোট কিনেছেন, নির্বাচনে ৫ কোটি খসিয়েছেন, তা উসুল করতে হবে না? এই ৫ কোটি আর পরের নির্বাচনের জন্য ১০ কোটি উনি আগেই উন্নয়ন খাত থেকে আলাদা করে রাখেন, চ্যালা-চামুন্দা পোষেন তাদের দেন। আর মন খুব ভালো থাকলে আমাদের সরকারি ট্যাক্সের টাকায় কিছু রাস্তা হয়তো মেরামত করেন, কিছু বানানও বটে। তবে তা শুধুই পরের ভোটে এ করেছি, সে করেছি দেখানোর জন্য। নির্বাচনে জেতা মুখের কথা, কত্ত পরিশ্রম, কত্ত ধকল যায় সেগুলোরই পারিশ্রমিক নেন উনি। খবরদার এটাকে টাকা মারা বলেছেন তো! বলুন পারিশ্রমিক! আর আমাদের জনগণও তো খুশিই! 'ঝন্টু ভাইয়েততে ৫০০, মন্টু ভাইয়েততে ৭০০। ভোটটা হারা মন্টু ভাইকি দিমো।' 'ভোটটা দেবার সময় টাকাটাই দেখা উচিত, মাইকে চরিত্র সবার ফুলের মতোই পবিত্র হয়!' সে তো ১২০০ পেয়ে হেব্বি খুশি। কিন্তু সে জানে না তার বাড়ির সামনের ভাঙ্গা রাস্তা মেরামতের একটা অংশ তার পকেটে ঢুকলো। পরে এই ভাঙ্গা রাস্তায় পড়ে তার ভাঙ্গা পায়ের পিছনে ১২০০০ টাকা চলে যাবে! উফ! কি লাভে লাভ! ইটস ১০০% লাভ! যাই হোক এসবের মাঝেও কিছু সৎ মানুষ আছেন যাদের আসল উদ্দেশ্য সেবা করা তাদের জন্যই হয়তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা শেষ করছি! 

(সৃজনশীল কল্পনাপ্রসূত লেখনী)

(কাওকে সরাসরি কটাক্ষ না করায় বাংলাদেশ সংবিধানের স্বাধীন মত প্রকাশ বিধিমালা (৩৯ তম অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী আমার লেখাটি আইনসঙ্গত। কেউ ফাসি চেয়ে লজ্জা দিবেন না)

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১

সীমা লঙ্ঘন

এই মেয়েটা এখানে কেন? এতদূর থেকে এসেছে? এতটাই টান ছিল! বাসায় কি ও বলে এসেছে! আর অলকের মা জানে ও কে? অলকের মা হয়তো জানে মেয়েটা অলকের প্রেমিকা। হয়তো অলক নিজেই বলেছিলো। নাহ! মনে হয় জানে না। জানলে ও এমন অপরিচিতের মতো বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুকি দিতো না। আন্টির কাছেই সরাসরি যেত। আমার কি মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিত? সান্ত্বনা দেওয়া উচিত? ওর সাথে একটু কথা বলে যদি ওর মনটা একটু হালকা হয়। যাবো? কিন্তু ওদিকে তো অনেক ভীড়! এসব আজগুবি কল্পনা ছেড়ে পাশে এসে দাড়ালাম মেয়েটার। “আমি আপনাকে চিনি। ছবিতে দেখেছি। অলক আপনার কথা প্রায়ই বলতো। বিকেল তো হয়ে আসলো, বাসায় ফিরবেন না? ধীর লয়ে, মিনমিনে উত্তর পেলাম “বাসায় যাওয়ার আর মুখ নেই।” “যুক্তি দিয়ে ভাবুন। আপনার উপস্থিতি এখানকার পরিস্থিতি বদলাবে না। চলুন, আমি আপনাকে বাসে তুলে দিচ্ছি।” মেয়েটি আমার কথা শুনলো। টিকেট ভাড়া মেয়েটির ছিলো না; আমি টিকেট কেটে দিতে চাইলাম। কিন্তু সে তাতে না করে বললো, দু হাজার টাকা ধার দিতে পারবেন? বাস আসলো, মেয়েটিকে উঠিয়ে দিয়ে আবার অলকের বাসায় আসলাম। ইতোমধ্যে আমার পরিচিত কিছু বন্ধুও এসেছে। ওদের নিয়ে স্কুলের নদীর পাশটায় বসলাম। কেউ কথা বলার কিছু পাচ্ছে না। সিফাত হঠাৎ প্রশ্ন তুললো, পুলিশ তো এসছিলো, মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে? সাকিব বললো, “ওরা কি আর অফিশিয়ালি এগুলো বলবে? পুরো ব্যাপারটা বলি শোন, আন্টি দিনাজপুরে গেছিলো। বাসায় তো কেউ ছিলো না। আর খুনটাও দেখ অন্যরকম। আমাদের সবাইকে অলকের সিম দিয়েই মেসেজ করা হলো Alok's dead! রহস্যজনক না? আমি তো প্রথমে ভেবেইছিলাম অলক প্রাংক করছে। পরে তোরা কল দিলি, তোদেরও একই মেসেজ দিয়েছে। তখনই তড়িঘড়ি করে অলকের বাসায় গেলাম। আমরা সবাই মিলেই তো দেখলাম, রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো, গোলাপ ফুল! লাইটিং! ক্যান্ডেলস! সামনেই একটা কেক। কেটে খাওয়াও হয়ে গেছে। আর অলক? অলক পুরো নগ্ন, চিৎ হয়ে বিছানায়, বুকে কেক কাটার চাকু। শুধু চাকু মেরে খুন হলে তো হতোই। কিন্তু এই খুনি তো হাতের দশ আঙ্গুলও তো এক এক করে কেটে আলাদা করে দিয়েছে, আর নুনুটাও তো পুরো বিচ্ছিন্ন করেছে। তা দেখতেই তো পাড়ার লোকে বাড়ি গিজগিজ করছিলো। পুলিশকে ফোন দিলাম, আন্টিকেও জানালাম। আন্টির কন্ডিশনটা চিন্তা করতে পারছিস! কি ব্রুটাল খুন?” কেউ একজন বললো, অলকের সেভাবে কোন শত্রু ছিলো না। আর ধর্ষণ-টর্ষণ কেসও তো নেই যে ধর্ষিতা… নিস্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম তবে শেষ কথাটায় আমার মাথা ঝিম মেরে এলো। আমি আমার বন্ধুর খুনিকেই….? পুলিশ জবানবন্দি যখন নেবে তখন কি আমার বলা উচিত আমার সন্দেহের কথাটা? আমার এতো ভালো বন্ধুকে যে খুন করেছে তাকে ছেড়ে দেবো? পরক্ষণেই মনে হলো, আমার মৌনতাই হয়তো মৃত অলকের সম্মান আর মেয়েটির জীবন বাঁচাবে। যে অলককে সবাই আদর্শ ধরে, আর মৃত্যুর পর তাকেই সবাই ধর্ষক হিসেবে চিনবে? অলকের মা হয়তো ছেলে হত্যার বিচার পাবে তবে সে বিচারে কি শান্তি পাবে? উনিও কি আজীবন লজ্জায় অলকের এই পরিচয়টা লুকিয়ে রাখবে না? আলোচনা থেকে উঠে এলাম। নদীর পাড়টা ধরে হাটছি। বিবেক আর মন আলাদা কথা বলছে। কিছু তো মিলছে না। বুঝতেই পারছি না কী করা উচিত, কী না! সূর্য অস্ত যাচ্ছে। লাল হয়ে সূর্য তার শেষ রশ্মিটাও আমার দিকে ছুড়ে দিলো। আমি যেন সেই রশ্মি দ্বারা বজ্রাহত হলাম। আগুন লেগে গেল শরীরে। কেন যে মানুষ সঙ্গম আর ধর্ষণের সূক্ষ্ম সীমা বোঝে না। কেন?


(কলাবাগানের ঘটনাটা এমন হলে হয়তো ভালো হতো। আর হ্যাঁ, অলকসহ সব চরিত্রগুলো কাল্পনিক)


শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১

শীতসন্ধ্যা

আমার নিশ্চল জানালায় সীমাহীন আকাশ পড়ে ছিল,

পড়ে ছিল শীতের প্রশান্ত রোদ্দুর।

অল্প ভেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি মুগ্ধ হতাম,

মুগ্ধ হতাম গাছের বাদামি পাতার বিচ্ছুরণ দেখে 

একের পর এক,

সারির পর সারি,

গুচ্ছের পর গুচ্ছ;

এটা নিতান্তই ওদের খেলা নয় , নয় শুধু স্থানন্তর 

ওরা যেন উড়ে চলে ; ঘুরে চলে 

আনবে বলে যুগান্তর ।

জানালা থেকে হাত বাড়ালেই ওরা আমাকে স্পর্শ করত 

বলত, শেষবেলার অতিথি পাখির গল্প।

তার আবেগে দলছুট পাখি ছানার কান্না আমার কানে বাজত ।

হয়ত লম-বা তালগাছটা তার মা’কে খুঁজে দিতো ।


যখন ফেরিওয়ালার হাক ই নয় বরং তার হৃদস্পন্দনও শোনা যায়

তখন বাড়ির ছোট্ট মেয়েটিও বেরিয়ে পড়ে 

কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসের খোজে 

হয়তো বা তার ছোট্ট ভাইটির জন্যে একটা পুতুল কেনে 

পুতুল খেলা তার বড্ড শখ

আর বড় ভাইয়ের জন্যে ?

সে মনে করে মোয়া কিনে রাখে 

মা বলেছেঃ সে ইস্কুলে পড়ে , অন-নেক বুদ্ধি

নদীর ঐপারে

কতক সঙ্গী সহিত দুরন্তেরা

জেলের মাছ ধরা দেখছে,

মরা নদীর গর্ভ থেকে শেষ পানিটুক 

নিঙড়িয়ে চলছে মাছ ধরার খেলা

খেলায় বাদ যায় নি খুকির বড় ভাই

বিকেল যখন আর একটু ভারী হয়ে আসে 

বাতাস যখন পথের ধুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়

তখন মাঠ ওদের ডাকে।

বলেঃ “কিরে আয় , বেলা তো আর নেই”


জানি না দেখেছো কিনা 

লালচে সূর্য যখন মাঠের উপর পড়ে 

তখন ধানের জমিগুলোর 

আ’ল সবচেয়ে ধূসর লাগে

লোকে ধূসর রঙ ওড়ায়, কাজে যায়

আবার ধূসর রঙ ওড়ায়, ঘরে ফেরে

কিন্তু সে রঙ কখনো যায় না 

এটি এমন এক সীমাহীন সময় যেখানে 

রাত নামলেও জীবন ফুরায় না 

রাস্তার কোন এক বাঁকে এক দরিদ্রা 

ভাপা বানাতে বসে

ঊফ! ধোয়া ওঠা ভাপা 

কোন এক ক্লান্ত বাবা ভাপা কিনতে আসে 

তার ঘরের ঘুমন্ত শিশুটির জন্যে

হয়ত কোনদিন কেউ আসে না ,

কিন্তু বুড়ি তার ছ’বছরের নাতনিকে নিয়ে

ভাপা বানাতেই থাকে , বানাতেই থাকে 

যতক্ষণ না তাদের রক্তমূল্য সম পোলাও চালের 

আটা আর আগুনটা আছে 

কুয়াশার শুভ্রতায় কালো কুকুরটার গা যখন 

মুক্তোর মতো জ্বলতে থাকে 

তখন বুড়ি তার জীবনদ্বীপের প্রজ্জ্বলিত 

আশা দেখতে পায় 

ভাবছো, কেমন করে জানি এসব গল্প ?

আহা! এসব তো আমাদের চিরচেনা গল্প

তাকিয়ে দেখ তুমিও এক বুড়িকে পাবে-

যাকে নিয়ে লেখার মতো কয়েকটি 

আঁচড় ছাড়া তুমি কিছু পাবে না।

লেখা: রুহান

২০১৮ এর কোন একদিন

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০

নরওয়েজিয়ান উড

 বইঃ নরওয়েজিয়ান উড

লেখকঃ হারুকি মুকারামি

অনুবাদকঃ আলভী আহমেদ


প্লট রিভিউঃ উপন্যাসটি বিশেষভাবে তাদের জন্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯, ১৯ শেষ হলে আবারও ১৮তে ফিরে যায়।

উপন্যাসের মূল চরিত্র ওয়াতানাবে এর হাইস্কুল বন্ধু বলতে ছিল মাত্র দুইজন। কিজুকি আর কিজুকির গার্লফ্রেন্ড নাওকো। কিজুকি অজ্ঞাত কারণ বশত (আমিও ভেবে চলেছি কারণটি কী) আত্মহত্যা করে। এর এক বছর পর একলা নাওকোর সাথে একদিন টোকিওতে দেখা হওয়ার পর তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। লক্ষ্যণীয় উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে নাওকোর প্রিয় গান নরওয়েজিয়ান উডের সাথে মিল রেখে। নাওকোর সেই মানসিক আঘাতটা ধীরে ধীরে মানসিক ব্যধিতে পরিণত হয়। স্যানেটেরিয়ামে যেতে হয় নাওকোকে। দূরত্ব বেড়ে যায়, শূণ্য স্থান তৈরি হয়। আর এই শূণ্য স্থানে আসে মিদোরি। নাওকোর শান্ত, ধীর, ভাবুক চেতনাধারার ঠিক উল্টো প্রবাহে মিদোরি আসে উপন্যাসে; প্রাণ সঞ্চার করবার জন্য। মূলত এই তিন জনকে নিয়ে উপন্যাসটি হলেও উপন্যাসটি শুধুমাত্র তিন জনের আশে পাশেই ঘুরপাক খায়নি। সুযোগ পেলেই লেখক পাঠকদের ঘুরে নিয়ে এসেছেন অন্য উপগল্পে। হারুকি মুকারামি এই উপন্যাসে মাধ্যমে হয়তবা প্রেমের পুরাতন সঙ্গাই নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়ে গেছেন। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে করে তুলেছন আরও প্রেমময় আরও পরিশীলিত।


এবার আসি বাংলা অনুবাদ আর অনুবাদকের কাছে। বইটি অনুবাদ করেছেন আমার প্রিয়ভাবে পরিচিত এক মানুষ, আলভী আহমেদ, যিনি একজন শতভাগ নান্দনিক বাঙ্গালি। ভাইকে ধন্যবাদ এই অমূল্য বইটি উপহার দেওয়ার জন্য। 

আমার জানা মতে, হারুমি মুকারামি একজন সাবলীল লেখক আর ভাষা সমুদ্রের পানির মতো স্বচ্ছ হলেও সমুদ্রের মতো গভীর। তার লেখনী জনপ্রিয় হয়ে ওঠার মূল কারণই হয়তবা এই সাবলীলতা। আর হারুকি মুকারামির সেই সাবলীলতা বাংলা অক্ষরে বেঁধে এমন একটি চমৎকার অনুবাদ প্রকাশ করার পাণ্ডিত্য দেখে অনুবাদকের প্রতি মুগ্ধ হয়েছি। অনুবাদে কোন প্রকার আড়ষ্টতা খুঁজে পাইনি। বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ সামর্থটুকু ব্যবহার করে উপন্যাসটি লেখা হয়েছে এ নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিছু অনুচ্ছেদ পড়ে মনে হয়েছে যেন বাংলা সাহিত্য পড়ছি যার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ আর চরিত্রগুলোও বাঙ্গালি এমনকি আবেগগুলোও এই বাংলার মাটি প্রসূত। সাবলীল করার উদ্দেশ্যে অনুবাদক বাংলা চলতি কিছু আবেগ প্রকাশন বাক্য সংযোজন করেছেন যা পড়ে ওয়াতানাবেকে আর মিদোরিকে টোকিওর নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্বের বিদ্যার্থী লেগেছে। যেন ওরা টোকিও শহরে টইটই করে ঘুরে বেড়ায় না, ওরা ঢাকাতে ঘোরে। ওরা শিঞ্জুকু স্টেশনে না বরং কমলাপুরে ট্রেন ধরে। আমার মনে হয়েছে চরিত্রগুলোর নাম বাঙ্গালিকরণ করলেই এটি কোন বিখ্যাত জাপানিজ উপন্যাসের অনুবাদ না বরঞ্চ বাংলা সাহিত্যের মৌলিক উপন্যাস হয়ে যেত। আমার রিভিউ পড়েই বুঝতে পারছেন আমি বইটর লেখক আর অনুবাদকের রীতিমত ভক্ত বনে গেছি। আপনিও পড়ুন; ভালো লাগতে বাধ্য।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০

সাইন্স ফিকশন

নামার গ্রহে গোলকনাথ বাবু
আ আ ম রওনক শাহরিয়ার রুহান 
এক
২০৮৩ সাল
কলকাতা 
পৃথিবী এখন প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখন কলকাতার রাস্তায় আর গাড়ী চলে না। এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট ফ্লায়ার (E.M.F)। কিন্তু এত উন্নতি সত্বেও মহাবিশ্বের টাইম ট্রাভেল এর রহস্য তখন ও ভেদ করা যায় নি। কিন্তু এক অদ্ভুত নামের প্রথম বারের মতো তৈরি করল অতীতে যাবার মেশিন। টাইম মেশিন! টাইম মেশিনটা বেশ ছোট। যন্ত্রটির নাম আবিষ্কারক দিয়েছিল আর্কার। ২১ শতকের কোন বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করে নি যে এই তুচ্ছ জিনিসটা টাইম মেশিন হতে পারে। আবিষ্কারকের দাবি তিনি ৮৪ বছর আগেকার মানুষ। এ শুনে কেউ তার মজা বানাল, কেউ তাকে রাস্তার পাগল বলে উড়িয়ে দিল। লোকটার নাম গোলকনাথ বাবু। এমন নাম শুনে আমিও হেসে উঠেছিলাম বৈকি। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব গান গাইতেন, এমন অদ্ভুত ছবি আকতেন, গল্প লিখতেন যা দেখলে তাকে মানুষ বলেই মনে হত না। যেন অন্য গ্রহের কেউ।
কিন্তু না! তিনি ঠিক প্রথম চেষ্টায় ৮৪ বছর পিছে চলে যান। আর ফিরে আসেন নি এই ৮৪ বছর আগেকার পৃথিবীতে। এই কারণেই হয়তো বা আরো হাজার বছর কেটে যাবে কিন্তু মানুষ টাইম ট্রাভেল করতে পারবে না। প্রকৃতির সবচেয়ে গূঢ় রহস্য হয় তাই অভেদ্য থেকে যাবে। 
৮৪ বছর আগে ফিরে গোলকনাথ বাবু কাশ্মীর গেলেন। সেখানে তার এক ছোট ছেলে আছে তাকে নাকি বলতে হবে ৮৪ বছর আগের এক রহস্য যা তার জীবন বদলে দিয়েছিল। আর হ্যাঁ তার পুরনো বন্ধু অশোককেও বলতে হবে কি হয়েছিল সেই রাতে। 
এই সব ভেবে গোলকনাথ বাবু বিকেলের বৃষ্টির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে স্মৃতি হাতড়াতে থাকেন, ৮৪ বছর আগের স্মৃতি!

দুই 
১৯৯৯ সাল 
কলকাতা 

গোলকনাথ বাবু আইনের ছাত্র ছিলেন। আইন পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। তার আইন ব্যবসায় মন্দা পরায় জীবিকা হিসাবে সাংবাদিকতাকেই বেছে নিলেন। এখন তিনি দেশের প্রথম সারির ও কয়েকটা প্রসিদ্ধ পত্রিকার সাংবাদিক। আইন পড়ার কারনে রাত মাঝে একটা বাস্তবিকতা আর যৌক্তিকতা কাজ করত। আর মনে ছিল রহস্য উদঘাটন করার প্রবল ইচ্ছে। কিছুটা নেশার মতো। তাই দেশ বিদেশে বিভিন্ন রহস্যময় ও জটিল সংবাদ জোগাড় করা আর সে সমন্ধে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখাই ছিল তার কাজ। হুট করেই চলে যেতেন শিমলায়, বরফ দেখতেন, সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলতেন। আবার মাঝে মাঝে কাওকে না বলেই ১০-১৫ দিন গায়েব হয়ে যেতেন কোনকিছুর অনুসন্ধানে। এসব কারনে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন তার পরিবার থেকে। তার বড় ছেলে আর মেয়েরা তাকে পরিষ্কার করে শুনিয়ে দিয়েছে, “এরকম কাজ করাটা মোটেই আমাদের ভালো লাগছে না বাবা। তাছাড়াও তোমার বয়স হয়েছে এমন ছেলে মানুষি তোমার মানায় না।”
ছেলে-মেয়েরা মাঝে মধ্যেই তাকে এই উদ্ভট কাজ ছাড়তে বলে। এসব কথায় বিদ্ধ হয়ে গোলকনাথ বাবু একদিন বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু ছোট ছেলেটা পিছু ছাড়ল না। সেও যেতে চাইল তার সাথে। সাথে নেবার ইচ্ছে ছিল না। কারন কোথায় যাবে এটাই গোলকনাথ বাবু জানতেন না। কিন্তু ছেলেটার রহস্যের প্রতি আগ্রহ আর মানসিকতা দেখে তাকে সাথে নিয়ে কলকাতার এক ভাড়া বাড়িতে থাকতে লাগলেন। 
ছেলেটার বয়স মাত্র ১৬। নাম আনন্দ। ওর স্কুল নতুন বাসা থেকে খুব কাছে। এসব কারনেই হয়তো আনন্দ এর চলে যাওয়াতে বড় ছেলে আপত্তি করল না। গোলকনাথ বাবুর স্ত্রী মারা গেছেন ৫ বছর হল। 
যাই হোক গোলকনাথ বাবুর ছোট ছেলেকে নিয়ে দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। সপ্তাহে একবার রিপোর্ট জমা দেওয়া আর কয়েকবার মিটিং ছাড়া কোন কাজ ছিল না গোলকনাথ বাবুর। অধিকাংশ সময় তিনি বাড়িতেই থাকতেন। এখন ওসব পুরনো পাগলামি কমিয়ে দিয়েছে গোলকনাথ বাবু।
গোলকনাথ বাবুর ছোট ছেলেটার নাম আনন্দ। নামে যেমন আনন্দ তেমনি আচারণেও ছিল হাসি খুশি। তবে বাবা যখন কেস স্ট্যাডি গুলো পড়ে শোনাত তখন ও কেমন জানি গম্ভীর হয়ে পড়ত। মনোযোগ দিয়ে শুনত। স্কুলে তার বন্ধু বান্ধব বলতে তার কেউ নেই। কেউ ভালোও বাসে না আবার কেউ ঘৃণাও করে না। সে যেন উপস্থিত থেকেও ওদের কাছে অনুপস্থিত। তবে এ নিয়ে আনন্দের কোন মাথাব্যাথা নেই। 

তিন
গোলকনাথ বাবুর ভাড়া বাড়ি

বৈশাখের আম খাওয়ার ছুটি পড়ে গিয়েছে। কয়েকদিন ধরে অসহ্য গরমের পর বৃষ্টি নেমেছে। তারই লোভে বাপ-ছেলেতে মিলে বৃষ্টিতে ভিজছে। ঠিক সেই সময় আনন্দ টেলিফোনের শব্দ শুনতে পায়। ক্রিং ক্রিং করে বেজেই চলেছে টেলিফোনটি। 
আনন্দ ঘরে গিয়ে ফোনটি তুলল।
-হ্যালো, আমি অশোক চক্রবর্তী বলছি। আমি কি গোলকনাথ বাবুর সাথে কথা বলছি? 
-না। আমি তার ছেলে বলছি।
-ওনাকে একটু ডেকে দেবে বাবু?
-জ্বি। একটু অপেক্ষা করুন। 
গোলকনাথ বাবু ফোনটি ধরেই গম্ভীর হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বললেন,
“আনন্দ, আমাকে দুই সপ্তাহের জন্য কাশ্মীর যেতে হবে। অনেকদিন পর একটা জটিল কেস পেয়েছি। এইটা মিস করা যাবে না। তুই বরং এই ক’টা দিন বোনের বাসায় থাক। আমি ফিরে এলেই তোকে নিয়ে আসব।” 
বোনের বাসায় সে দিব্যি থাকতে পারত। কিন্তু এমন একটা রোমাঞ্চকর কেস তাও আবার কাশ্মীরে! বাবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। এমন সুযোগ সে হাতছাড়া করবে কেন?
তাই অনেক জোরাজুরির বাবাকে রাজি করাল তাকেও কাশ্মীর নিয়ে যেতে। ছেলের অসীম আগ্রহ দেখে গোলকনাথ বাবু আর না করলেন না। 
পরদিনই তারা ট্রেনে উঠে পড়লেন।
ট্রেনে উঠেই আনন্দ জিজ্ঞাসা করল, “বাবা, কেসটা আসলে কি?”
গোলকনাথ বাবু তার জটিল কেসটাকে যতটা পারলেন সহজ ভাষায় রূপান্তর করে বললেন, 
“প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় আমার এক বন্ধু ছিল। অশোক চক্রবর্তী। বেশ ভালো ছাত্র। শুনেছিলাম পরে সে নাকি বিলেতে পড়াশোনা করে অনেক বড় মহাকাশ বিজ্ঞানী হয়েছে। এখন সে কাশ্মীরের international space analysis center এর প্রধান। সেই আমাকে ফোন করেছিল কালকে। এই মহাবিশ্বে আমরা একা না আমাদের আরো বুদ্ধিমান বন্ধু আছে সেটা খোঁজা তার কাজ। কাল কি পরশু তার এক দল বিজ্ঞানী ভিন গ্রহে জীব খুজতে ultra radio wave এক গ্রহের দিকে পাঠিয়েছিল। তারা নাকি সেটার প্রতিউত্তর পেয়েছে। ভিন গ্রহের প্রাণিরা নাকি তাদের ফিরতি বার্তা পাঠিয়েছে। যা কিনা আমাদের ultra radio wave এর থেকে তিনগুণ শক্তিশালী। ওদের ধারনা ওই গ্রহের প্রাণিরা প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। এই ব্যাপারেই ঘাটাঘাটি করতে কাশ্মীর যাচ্ছি।”
গোলকনাথ বাবু যেন এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেলল, আনন্দের মুখের দিকে তাকানই নি। মুখ ফিরে তাকাতেই দেখে আনন্দ গভীর ঘুমে। হয়ত স্বপ্নও দেখা শুরু করে দিয়েছে। স্বপ্ন দেখা ভাল। তাই তিনি আনন্দ কে আর ডাকলেন না। 
কিন্তু পাশের একটা লোক হা করে শুনছিল তার গল্প। গোলকনাথ বাবু তার দিকে তাকাতেই সে বলল 
-বাহ ! আপনার কাহিনি তো বহুত ইন্টারেস্টিং আছে। তা আমার বাসা তো ওই  এর পাশেই। ব্যবসার কাজে কলকাতা এসেছিলাম। তাই বুঝি ব্যাপারটা জানি না। কোথায় থাকবেন তার ব্যাবস্থা হয়েছে? দেশের যা অবস্থা...রাতে বেরুলেই হয় হিন্দুস্থানি নয় পাকিস্তানি মিলিটারী গুলি করবে।
গোলকনাথ বাবু বললেন
- না। তবে একটা বাসা হয়ত ভাড়া নেব কিংবা হোটেলে উঠব। -পাবেন না মশাই। ওখানে আশেপাশের সব হোটেল বন্ধ। তার চেয়ে বরং আপনারা আমার বাসা তেই থাকবেন। 
- আচ্ছা, আচ্ছা তাই হবে কিন্তু ভাড়াটা?
- ওর প্রয়োজন নেই। মাত্র ক’টা দিন থাকবেন তাতেই টাকা নেব এমন ছোট কাশ্মীরের মানুষ নয়।
পরে কথায় কথায় গোলকনাথ বাবু জানতে পারল লোকটা নাম আমজাল কাদেরি। ধনী মুসলিম ব্যবসায়ী। পাকিস্তানেও তার কয়েকটা বাড়ী আছে। যেমন ধনের ভান্ডার বড় তেমন মন টাও বড়। 

চার 
২৯ এপ্রিল ১৯৯৯ 
কাশ্মীর

সন্ধ্যা বেলা। চারি দিকে ঝি ঝি পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। 
সন্ধ্যার অল্প আলোতেই আমজাদ কাদেরির বাড়ির সুবিশালতা আন্দাজ করতে পারল গোলকনাথ বাবু। 
তাদের থাকার জন্য এক বিশাল ঘর বরাদ্দ করা হল। ঘরে সবকিছুই সাজানো গোছানো, কিছুটা প্রাসাদের অনন্দরমহলের মতো। আতিথেয়তার মুগ্ধ হয়ে রাতে ঘুমোতে গেলেন গোলকনাথ বাবু। 
সকালে পাখির কিচির মিচির শব্দ আর সূর্যের মিষ্টি রোদের ছোয়া। কুয়াশার ধুসর চাদর আর শিশির ফোটা, মাঝে মাঝে সবুজ ঘাসের সাথে মিলে সবুজ মুক্তোর আভাস দেয়। জানালার পাশেই একটা আপেল গাছ। বাহারি ফলের একটি সবুজ বাগান। এসবের মাঝেই খুঁজে পাওয়া গেল মুগ্ধ মুক্ত বালক আনন্দকে। সে তার ক্যামেরা বের করে কিছু ছবি তুলছে।
খানিক পর গোলকনাথ বাবু সকালের নাস্তা খেতে খেতে আমজাদ কাদেরিকে বললেন, “কলকাতার সরু গলির বাতাস আমার ফুসফুসটাকে বিকল করে দিয়েছিল। কাশ্মীরের শিটল বাতাস যেন তাকে আবার সতেজ করে দিল। এজন্যেই বুঝি কাশ্মীর কে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়।”
আমজাদ সাহেবের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেল। আবেশ কাটিয়ে বলল, “ কাশ্মীর কে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়!? বলুন বলা হত। এখন যে অবস্থা চলছে। স্বর্গে যেমন দেবতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আর সেই ক্রোধে ধ্বংস হয় সভ্যতার পর সভ্যতা তেমনি ১৯৬৫ সাল থেকে আমাদের পরিচিত মুখ গুলো ধীরে ধীরে বুলেটের অভিশাপে হারিয়ে যাচ্ছে। এমন কি আমার একমাত্র ছেলে শাহাদতকেও ওরা ছাড় দেয় নি। শাদতের বয়স ছিল মাত্র ১৭। আনন্দের মতোই। কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে মিছিলের ভিড়ে পরে যায়। আর তারপর পুলিশের গুলিতে মারা পড়ল। সন্তানের শোকের ধাক্কা না সামলাতে পেরে আমার বিবিও কিছুদিন পর আমাকে একা করে চলে গেলেন। কি আর করা! সবই কপাল। আল্লাহের গজব।”
এসব কথা বলতে বলতে আমজাদ সাহেবের মোটা ফ্রেমের চশমা ঝাপসা হয়ে এল চোখের লোনা পানিতে। 
গোলকনাথ বাবু কলকাতার মানুষ। এসব ব্যাপারে কিছু কিছু জানেন, কিন্তু এখানে এসে দেখেলেন তাদের যতটুকু জানানো হয় তার থেকেও বেশি জানানো হয় না। তাই কিছু না বলে উঠে এলেন। আর যাবার সময় বললেন
- আপনাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার নেই, আমজাদ সাহেব। কাল আমাদের একটু অশোকের সাথে দেখা করানোর ব্যাবস্থা করে দিলে কৃতার্থ হতাম।
-আলবাত করাবো। আপনারা দুপুরের খাবার খেয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আর হ্যাঁ! সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিয়ে আসবেন।”
গোলকনাথ বাবু ও আনন্দ; অশোকের সাথে দেখা করল। অশোক বুঝিয়ে বলল যে, “ দু’দিন আগে রেডিও সিগন্যাল রাডারে অতিমাত্রার কম্পন পাওয়া গেছে। আর তার ধারনা যে এই ভিন গ্রহবাসী দিন কতকের মধ্যে পৃথিবী সাথে যোগাযোগ করবে। এরা এতটাই উন্নত যে আমাদের তৈরি রকেট তাদের কাছে খেলনার মতো।” 
অশোকের কথায় আনন্দ কিছুটা অবাক হয়ে বলল – 
“আচ্ছা কাকু! সত্যিই কি এমন কোন গ্রহ আছে যেখানে প্রাণী আছে?”
অশোক বলল, “শুধু একটাতে নয় এমন লক্ষ লক্ষ গ্রহে এমন প্রাণি পাওয়া সম্ভব। আমরা যে গ্রহটিকে নিয়ে কাজ করছি সেই গ্রহটির নাম হল “নামার” এটি আমাদের পাশের গ্যালাক্সি স্পাইরাল ডি গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। সেটা পৃথিবী থেকে ৫০ হাজার আলোক বর্ষ দূরে।” 

এরপর গোলকনাথ বাবু ছেলেকে নিয়ে আমজাদ কাদেরির বাসায় ফিরে এল। কিছুক্ষণ একমনে চিন্তা করে ব্যাপারটাকে সহজ করার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন ব্যাখ্যাই যুক্তিযুক্ত হয় না। কয়েকদিন এভাবেই কেটে গেল।
 
এক রাতে আমজাদ সাহেব ও গোলকনাথ বাবু ছাদে বসে চা খাচ্ছেন আর এসব বিষয়েই আলোচনা করছিলেন। আন্য দিকে আনন্দ আপন মনে ছবি তোলায় ব্যস্ত। রাতের আকাশের ছবি। ছবি তুলতে তুলতে দূর আকাশে ফোকাস নিল সে। জুম ইন করতেই তার ক্যামেরায় ধরা পড়ল অস্বাভাবিক নীল আভা যা আকাশের এক কোনায় জমাট বেধেছে। আনন্দ গোলকনাথ বাবুকে ব্যাপারটি জানাতে দেরি করল না।
বিষয়টা গোলকনাথ বাবুর কর্ণগোচর গোলকনাথ বাবু চাদরটা গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়ল। আমজাদ সাহেবের বাধা আর মিলিটারিদের ভয় কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারল না। 
কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি দেখলেন একটি U.F.O; space sub-center এর কাছে ল্যান্ড করেছে। আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে মহাজাগতিক নীল রশ্মি।
কাছে যেতেই প্রচন্ড আলো প্রচন্ডতর হতে লাগল। সেই নীল আভা তার মস্তিষ্ককে অচেতন করে ফেলল। 
পাঁচ 
নামার গ্রহ 

গোলকনাথ বাবু যখন তার চোখ মিটি মিটি করে খুলল তখন তিনি দেখলেন উপরের আকাশটা আর পৃথিবীর মতো নীল নেই; হালকা লালাভাব। আর তার ডান ও বাম পাশে দুটি নক্ষত্র। দুটোর একটির আলো বেশি আর আরেকটি ক্ষীণ। তিনি একটা চকচকে ধাতুর উপরে ভেসে আছেন। তার চারিদিকে কিছু আজব যন্ত্রপাতি। সে সব যন্ত্রপাতি চালাচ্ছেন কিছু আজব পোশাক পরা জীব। তাদের পোশাক থেকে নীল আভা বের হচ্ছে। গোলকনাথ বাবু কিছু ক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর বলে উঠলেন, “আমি কোথায়? আর তোমরাই বা কারা?” বলতে না বলতেই একটা ছোট যন্ত্র একটা শব্দ করে উঠল –
Language Detected!
  Bengali 
 Nineteen Ninety version
 Dialect: Kolkata
এবার গোলকনাথ বাবু খেয়াল করল তার আশে পাশে কিছু লম্বা দেহের প্রাণীও আছে। তাদের সকলের হাতে ও পায়ে চারটি করে আঙ্গুল আছে! দেখতে প্রায় মানুষের মতো। আর প্রাণী গুলোও বন্ধুসুলভ। তার কোন ক্ষতি করছে না। বরং তারা তাকে নিয়ে বেশ উৎসাহী। তারা যন্ত্রটিকে কি যেন ভাষায় আদেশ দিল আর তার পর থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলতে শুরু করল। 
একজন বলল- ‘ ভয় পাবেন না। আমরা আপনার কোন ক্ষতি করব না। আর আমরা আপনার ভাষা ডিটেক্ট করে ফেলেছি। আপনার গ্রহের সাথে যোগাযোগ করতেই আপনাকে আমরা এখানে তুলে এনেছি। আপনার চারপাশে প্রচন্ড শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারনেই আপনি এখানে আসতে পেরেছেন। প্রাকৃতিকভাবেই এই চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন হয়েছে। যদিও এটা অস্বাভাবিক আর কারনটাও আমাদের অজানা। তবে আশা করছি আপনাকে আবার চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে পাঠাতে পারব। আমাদের বিজ্ঞানীগণ এ নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।’ 
গোলকনাথ বাবু বুঝতে পারলেন তিনি সত্যিই দূর এক গ্যালাক্সিতে এসে পড়েছেন। পৃথিবী থেকে যে সিগন্যাল এসেছিল আর তারাও যে ফিরতি সিগন্যাল পাঠিয়েছিল সে সমন্ধেও তাকে বিস্তারিত জানানো হল। তারা বলল যে একটা ছোট চিপের মধ্যমেই ফিরতি সিগন্যালটি দিয়েছিল। 
এসব কথা বলতে বলতেই দুটি নক্ষত্রের একটি ডুবে গেল আর আরেকটি তখন মধ্য গগণে। তারা বলল,
-এই সময়টাকে বলে সেম্রোটিক ফেজ। আপনাদের ভাষায় রাত। আপনাদের নাকি একটি নক্ষত্র। তা আপনাদের আলো-টালোর সমস্যা হয় না?
গোলকনাথ বাবু ওতে হেসে ঊঠে বলল- “বলেন কি মশাই ! সূর্যের তেজে মানুষেরা ছাতা মাথায় ঘোরে।”
ভিনগ্রহের প্রাণিদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ বলে উঠল, “আমরা নোমিরা জাতি। আপনাদের মতো অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছি। কিন্তু ছাতাটা কী বিষয়?”
নোমিরা জাতির প্রযুক্তিগত উন্নতি ঈর্ষণীয়। ওরা একটি মাত্র কলমের মতো যন্ত্র দিয়ে এত শক্তিশালী ফিড ব্যাক সিগন্যাল দিয়েছে সেখানে মানুষের তা বিশাল দালান ভর্তি যন্ত্র দিয়েও দিতে পারে না। আর তার কিনা ছাতার মতো ছেলের হাতের মোয়া প্রযুক্তি শিখতে চাইছে। শুনে অবাক হয়ে গেলেন গোলকনাথ বাবু। জানে না তো জানেনা। অনেকেই তো অনেক কিছু জানে না। 
গোলকনাথ বাবু তাদের একটা ছাতা বানিয়ে দিলেন। ফিরতি পাওনা হিসাবে নোমিরা বিজ্ঞানীরা তাকে আর্কার যন্ত্র বানানোর ফর্মুলা বলে দিলেন। যার মাধ্যমে সহজেই অতীতে যাওয়া যাবে। তবে ভবিষ্যতে যেতে হলে অন্য ফর্মুলা প্রয়োগ করতে হবে। তাও বলে দিতে চাইলো তারা। কিন্তু গোলকনাথ বাবু বললেন
-কিছু রহস্যকে রহস্য থাকতে দিন যা মানুষেরা নিজে কষ্ট করে আবিষ্কার করবে। না হলে আমাদের মস্তিষ্কের দামই থাকবে না। 
এ শুনে নোমিরা জাতি বলে উঠল 
-এই মানসিকতার কারণেই হয়ত আপনারারই সেরা আর আমরা অনেক উন্নত হয়েও তা থেকে অনেক দূরে। 
তখুনি এক বিজ্ঞানী বলে উঠল 
-গোলকনাথ বাবুর চারপাশে আবার চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন হচ্ছে। মনে হয় তিনি আর কিছুক্ষণ পরেই আবার পৃথিবীতে ফিরে যাবেন। 
এ শুনেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তার গোটা দেহকে স্ক্যান করে নেওয়া হল একটি ফোরডি স্টাচু বানানোর জন্য। তাকে শোনানো হল নামার গ্রহের শ্রেষ্ঠ গান, গল্প, আর দেখানো হল আদের গ্রহের ছবি। সবই পৃথিবী থেকে আলাদা। একটু পরেই তিনি আবার অচেতন হয়ে পড়লেন; ফিরে আসলেন চিরচেনা পৃথিবীতে। 
কিন্তু একটা সমস্যা বিরাট হয়ে দাড়াল। তিনি নামার গ্রহে ২ ঘন্টার কম সময় থাকলেও পৃথিবীতে ততক্ষণে ৮৪ বছর কেটে গিয়েছে। তার পরের কাহিনীটা আমাদের সকলের জানা।

বাঙালির বৈশাখ

বাঙালির বৈশাখ
আ আ ম রওনক শাহরিয়ার রুহান

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের কোন একদিন
ভারতবর্ষ
সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর কিছুদিন হল বঙ্গাব্দ চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ তার রাজসভায় সবার সামনে বঙ্গাব্দ উদ্বোধন করার কথা। কিন্তু আজকে তাঁকে ও তাঁর রাজসভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে রাজপ্রাসাদের কোত্থাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে ফতুল্লাহ বেশ কিছু দিন ধরেই একটা জ্যোতিবিজ্ঞান নিয়ে পরীক্ষণ-নিরীক্ষণ চালাচ্ছিল। সম্রাটকে দেখাতে নিয়ে গিয়েই কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেলেছে ফতুল্লাহ। তারা বছর সাল, স্থান ঘুরে ২০১৭ সাল তথা ১৪২৪ বঙ্গাব্দে পৌঁছে গেছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কাছাকাছি কোথাও পৌঁছছে। একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করতেই শুরু হয়ে গেল পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চমক, মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রচন্ড ভিড়! সম্রাটের বুক ফুলিয়ে রাজকীয় কায়দায় হাটবার জো নেই। এতক্ষন পর্যন্ত আমির ফতুল্লাহ সম্রাটের সাথেই ছিলেন। কিন্তু এখন আর ফতুল্লাহকে আর দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে শুধু রঙিন মুখোশ আর মুখোশ।
কিন্তু একটা পিচ্চি ছেলে সম্রাটের রাজকীয় কুর্তি টেনে ধরল।
বলল, “তোমাকে একদম সম্রাট আকবারের মতো দেখাচ্ছে। কুর্তিটা কোত্থথেকে কিনেছো? খুব-ব সুন্দর।”
সম্রাট আকবর রক্তচক্ষু নিয়ে বলল, “কীহ ! তামিজ নিয়ে কথা বল তুচ্ছ বালক। আর হ্যাঁ, আমাকে আকবারের মত দেখিতে নয়; আমিই তৃতীয় মুঘল সম্রাট আকবর।”
“বাহ আংকেল আপনার এক্টিংটাও ঠিক আকবরের মতোই হয়েছে। কেউ চিনতেই পারবে না।” বলেই ছেলেটি হো হো করে হাসতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ছেলেটা পাশেই এক গাছের তলায় বসে পড়ল। 
এদিকে কেউ সম্রাট আকবরকে পাত্তাই দিচ্ছে না। সবাই মনে করতে লাগল কেউ সম্রাট আকবর সেজেছে। মহামতি আকবর কোন উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত ছোট্ট ছেলেটির শরণাপন্ন হলেন। 
কিন্তু সম্রাট কোনমতেই বুঝতে পারছেন না ছেলেটের হাতে ওটা কি? আলো জ্বলছে আর ছেলেটা ওটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ছেলেটি জিনিসটাকে কানে ধরল। আর মহামতির দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলতে লাগল।
আকাবর সদর্পে এসে বলল, “বাহ! তুমি সত্যই বিচক্ষণ বালক। একাধারে দুই ভাষায় কথা বলাটা সত্যই সুপান্ডিত্যের লক্ষণ। তবে তুমি কোন ভাষায় কথা বলিতেছিলে? চীনা না রোমান?” 
“চাইনিজ হতে যাবে কেন আংকেল? এটা তো ইংলিশ।”
“কিহ? হিঙ্গলিস? ও আমার বোধগম্য হয় না। সভাসদ বীরবল থাকিলে হয়ত বলিতে পারিত। তা বৎস তোমার পিতা-মাতা কোথায়?” 
“আসলে আমি মঙ্গলশোভা যাত্রায় হারিয়ে গেছি। কিন্তু ভয় নেই, বাবা-মাকে ফোন করেছি। ওনারা আসছেন।”
সম্রাট আকবর বিশেষ কিছুই বুঝলেন না। না বুঝেই মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলেন। পরে না আবার সম্রাতের মর্যাদাটা খোয়া যায় অবোধ শিশুর কাছে। 
তবুও তিনি বললেন, “দেখ! বোধ করি ফতুল্লাহ আবার সব ঠিক করে দেবে। কিন্তু এখন আমার চারপাশে যা ঘটিতেছে তার সবই আমার বোধাতীত। তুমি কি আমাকে বলিবে কি হচ্ছে এসব?"
“ওমা, কেন? জানেন না? আজ তো পহেলা বৈশাখ। আর এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। দেখছেন না ইয়া বড় বড় প্রতিকৃতি।”
“একটু খোলসা করে বলবে?”
“দাড়ান । বিস্তারিত বলছি। মনযোগ দিয়ে শুনবেন”
মহামতি আবার দেখলেন ছেলেটা জিনিসটার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর এনাগাড়ে কিছু বলতে লাগল। বাংলা ভাষাতেই বলছে তবে শুনতে একটু অন্যরকম লাগছে।
“ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে এগিয়ে চলে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রত্যেক জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে পালন করে খুঁজে পায় নিজেকে। পায় আত্মতৃপ্তি। তেমনি আমাদের বাঙালি জাতির সার্বজনীন ও সর্বপ্রধান উৎসব হল বাংলা নববর্ষ। 
পহেলা বৈশাখের ইতিহাস বেশ প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ। আর এটিকে বাঙ্গালিরা খুব সহজেই আপন করে নিয়েছে। 
যার হাত ধরে বাংলা নববর্ষের গোড়পত্তন হয়েছে তিনি হলেন তৃতীয় মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দিন মুহাম্মাদ আকবর। তার রাজ্য ছিল কৃষি প্রধান। খাজনা আদায়ের সকল কাজকর্ম চলত হিজরি সন অনুযায়ী। কিন্তু হিজরি পঞ্জিকা চন্দ্র নির্ভর। আর চান্দ্রবৎসর হত ৩৫৪ দিনে। অর্থাৎ সৌর বৎসর থেকে ১১-১২ দিন পেছনে। ফলে, হিজরি পঞ্জিকা ঋতু নির্ভর নয়। তাই রাজ্যে ঋতুভিত্তিক খাজনা আদায়ের জন্য তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রুপান্তরিত করার নির্দেশ দেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর কাজ শেষ হয় ১৫৮৪ সালে (৯৯২ হিজরি) কিন্তু হঠাৎ রাজার ইচ্ছে হল আমার শাসন আমল থেকেই বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হবে। তাই বঙ্গাব্দকে পিছিয়ে যেতে হল ৩৯ বছর একদম ৯৬৩ হিজরি। আর ৯৬৩ সনে আরবি প্রথম মাস মুহাররম ছিল বৈশাখ মাসে। তাই বৈশাখ হল বঙ্গাব্দর প্রথম মাস। 
তবে বঙ্গাব্দ চালু করাটা মোটেও সহজ ছিল না। আর জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ নক্ষত্র মন্ডলের বিশেষত চন্দ্র আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বাংলা মাস গুলোর নামকরণ করেন আর সপ্তাহের সাতদিন যে সাতটি গ্রহের নামে করা তা বলাই বাহুল্য। যেমন বৈশাখ মাসের নাম করণ হয়েছে বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে।
সূর্যকে প্রদক্ষিন করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। আর যেহেতু গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি ৩৬৫ দিনের। তাই এই ব্যাবধান ঘোচাতে ৪ বছর পর ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন যোগ করা হয়। কিন্তু বঙ্গাব্দে সে ব্যাবস্থা নেই। তাই ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। এটি হল-
বঙ্গাব্দের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের এবং আশ্বিন হতে চৈত্র ৩০ দিনের মাস হবে। আর প্রতি চতুর্থ বছরে ফাল্গুন মাসে একদিন যোগ করা হবে। 
বাংলা নববর্ষ পালন করতে বাঙ্গালির একটি ঐতিহ্য আছে। আছে আলাদা সংস্কৃতি। কিন্তু বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের আলাদা সুনাম আছে। বৈশাখী মেলা, লাল পেড়ো শাড়ী, লাল সাদা পাঞ্জাবী দুই বাংলার মানুষের মধ্যেই লক্ষ্যণীয় হলেও এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ঢাকা নগরীতেই মঙ্গল শোভাযাত্রা হত। তবে ১৪২৪ বঙ্গাব্দে কলকাতায় প্রথম বারের মত মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই ইতিহাসটা ১৯৮৯ সালের। অনেক আগে। তাছাড়াও ১৯৬৯ সাল থেকে সূচিত রমনার বটমূলে ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠান নতুন বছরের নতুন সূর্যকেই আহ্ববান করে। 
এসব আপন মনে শোনাচ্ছিল সম্রাট আকবর কে। হঠাৎ---
“কিয়ান কিয়ান!! কি করছো? কখন থেকে খুঁজেই চলেছি। আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কাকে এসব শোনাচ্ছিলে?”
কিয়ানের মা-বাবা এসে গেছে। 
“ও, এক অদ্ভুত আংকেলকে।”
“কোথায় তিনি?”
“এইইই.. তাই তো কোথায়। আমার সামনেই তো এতক্ষণ ছিল।”
“হয়েছে, হয়েছে নাটক করতে হবে না।”
“না মা আমি সত্যি বলছি।”
“হুম আমি জানি তো তুমি সত্যিই বলছ। এর আগে আমাকে যখন বোকা বানাতে তখনও তুমি সত্যিই বলেছিলে বাবা। আমি চিনি তো তোমায়।”
কিয়ান প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে চারুকলা অনুষদের আসে। তার নজর রঙিন খেলনাগুলোতে নয় বরং সে খুঁজছে সেই সম্রাট আকবরকে। কিন্তু কিয়ান তার চিহ্নমাত্র পায় না। কি জানি ফতেউল্লাহ সব ঠিক করে দিয়েছিল কিনা!