বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১

সীমা লঙ্ঘন

এই মেয়েটা এখানে কেন? এতদূর থেকে এসেছে? এতটাই টান ছিল! বাসায় কি ও বলে এসেছে! আর অলকের মা জানে ও কে? অলকের মা হয়তো জানে মেয়েটা অলকের প্রেমিকা। হয়তো অলক নিজেই বলেছিলো। নাহ! মনে হয় জানে না। জানলে ও এমন অপরিচিতের মতো বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুকি দিতো না। আন্টির কাছেই সরাসরি যেত। আমার কি মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিত? সান্ত্বনা দেওয়া উচিত? ওর সাথে একটু কথা বলে যদি ওর মনটা একটু হালকা হয়। যাবো? কিন্তু ওদিকে তো অনেক ভীড়! এসব আজগুবি কল্পনা ছেড়ে পাশে এসে দাড়ালাম মেয়েটার। “আমি আপনাকে চিনি। ছবিতে দেখেছি। অলক আপনার কথা প্রায়ই বলতো। বিকেল তো হয়ে আসলো, বাসায় ফিরবেন না? ধীর লয়ে, মিনমিনে উত্তর পেলাম “বাসায় যাওয়ার আর মুখ নেই।” “যুক্তি দিয়ে ভাবুন। আপনার উপস্থিতি এখানকার পরিস্থিতি বদলাবে না। চলুন, আমি আপনাকে বাসে তুলে দিচ্ছি।” মেয়েটি আমার কথা শুনলো। টিকেট ভাড়া মেয়েটির ছিলো না; আমি টিকেট কেটে দিতে চাইলাম। কিন্তু সে তাতে না করে বললো, দু হাজার টাকা ধার দিতে পারবেন? বাস আসলো, মেয়েটিকে উঠিয়ে দিয়ে আবার অলকের বাসায় আসলাম। ইতোমধ্যে আমার পরিচিত কিছু বন্ধুও এসেছে। ওদের নিয়ে স্কুলের নদীর পাশটায় বসলাম। কেউ কথা বলার কিছু পাচ্ছে না। সিফাত হঠাৎ প্রশ্ন তুললো, পুলিশ তো এসছিলো, মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে? সাকিব বললো, “ওরা কি আর অফিশিয়ালি এগুলো বলবে? পুরো ব্যাপারটা বলি শোন, আন্টি দিনাজপুরে গেছিলো। বাসায় তো কেউ ছিলো না। আর খুনটাও দেখ অন্যরকম। আমাদের সবাইকে অলকের সিম দিয়েই মেসেজ করা হলো Alok's dead! রহস্যজনক না? আমি তো প্রথমে ভেবেইছিলাম অলক প্রাংক করছে। পরে তোরা কল দিলি, তোদেরও একই মেসেজ দিয়েছে। তখনই তড়িঘড়ি করে অলকের বাসায় গেলাম। আমরা সবাই মিলেই তো দেখলাম, রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো, গোলাপ ফুল! লাইটিং! ক্যান্ডেলস! সামনেই একটা কেক। কেটে খাওয়াও হয়ে গেছে। আর অলক? অলক পুরো নগ্ন, চিৎ হয়ে বিছানায়, বুকে কেক কাটার চাকু। শুধু চাকু মেরে খুন হলে তো হতোই। কিন্তু এই খুনি তো হাতের দশ আঙ্গুলও তো এক এক করে কেটে আলাদা করে দিয়েছে, আর নুনুটাও তো পুরো বিচ্ছিন্ন করেছে। তা দেখতেই তো পাড়ার লোকে বাড়ি গিজগিজ করছিলো। পুলিশকে ফোন দিলাম, আন্টিকেও জানালাম। আন্টির কন্ডিশনটা চিন্তা করতে পারছিস! কি ব্রুটাল খুন?” কেউ একজন বললো, অলকের সেভাবে কোন শত্রু ছিলো না। আর ধর্ষণ-টর্ষণ কেসও তো নেই যে ধর্ষিতা… নিস্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম তবে শেষ কথাটায় আমার মাথা ঝিম মেরে এলো। আমি আমার বন্ধুর খুনিকেই….? পুলিশ জবানবন্দি যখন নেবে তখন কি আমার বলা উচিত আমার সন্দেহের কথাটা? আমার এতো ভালো বন্ধুকে যে খুন করেছে তাকে ছেড়ে দেবো? পরক্ষণেই মনে হলো, আমার মৌনতাই হয়তো মৃত অলকের সম্মান আর মেয়েটির জীবন বাঁচাবে। যে অলককে সবাই আদর্শ ধরে, আর মৃত্যুর পর তাকেই সবাই ধর্ষক হিসেবে চিনবে? অলকের মা হয়তো ছেলে হত্যার বিচার পাবে তবে সে বিচারে কি শান্তি পাবে? উনিও কি আজীবন লজ্জায় অলকের এই পরিচয়টা লুকিয়ে রাখবে না? আলোচনা থেকে উঠে এলাম। নদীর পাড়টা ধরে হাটছি। বিবেক আর মন আলাদা কথা বলছে। কিছু তো মিলছে না। বুঝতেই পারছি না কী করা উচিত, কী না! সূর্য অস্ত যাচ্ছে। লাল হয়ে সূর্য তার শেষ রশ্মিটাও আমার দিকে ছুড়ে দিলো। আমি যেন সেই রশ্মি দ্বারা বজ্রাহত হলাম। আগুন লেগে গেল শরীরে। কেন যে মানুষ সঙ্গম আর ধর্ষণের সূক্ষ্ম সীমা বোঝে না। কেন?


(কলাবাগানের ঘটনাটা এমন হলে হয়তো ভালো হতো। আর হ্যাঁ, অলকসহ সব চরিত্রগুলো কাল্পনিক)


কোন মন্তব্য নেই: