শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

নির্বাচন? না নীড়-বাছন? 🙄

(নির্বাচন রম্য, তাই রম্য হিসেবেই নিয়েন)

কালের চাকা ঘুরে নির্বাচনের পোস্টারে আবার শহর ছেয়ে গেছে। মাসের প্রায় পুরোটুকু জুড়েই বহু প্রচার-প্রচারণা চালালেন প্রার্থীরা, আমিও শুনলাম, দেখলাম। এই শোনা-দেখা থেকে যা উপলব্ধি হলো তা রাখ ঢাক ছাড়াই লিখছি।

(caution: informal & some sensitive, explicit contents ahead)

শুরু থেকেই শুরু করি। সাধারণ মানুষদের চেয়ে প্রার্থীর কাছে নির্বাচন দিন গণনা শুরু হয় বহু আগে থেকে। হয়তো আগের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই। এরপর দেশের বড় যে দুই দল আছে তাদের মনোনয়ন পেতে শুরু হয় ফাটাফাটি, কাটাকাটি যাকে ফর্মাল ভাষায় তোড়জোড় বলে। সবাই চান কিন্তু কেউ পান, কেউ পান না। এখন দলের মার্কা পাননি তাই বলে তো তার ইচ্ছা থেমে থাকতে পারে না তাই না!? তারাও দাঁড়িয়ে যান! দাঁড়িয়ে যায় তাদের… মার্কা। মাঝে মধ্যেই তারা নিজেদের মধ্যে শারীরিক কসরত করেন, কম্ফু প্র‍্যাকটিস করেন, বাশ দিয়ে ডাঙ্গুলি খেলেন। পরের অলিম্পিকের জন্য ৫০০ মিটার রিলে দৌড়ের প্র‍্যাকটিসও নির্বাচনেই হয়ে যায়। স্পিড (হেব্বি এনার্জি) খেয়ে তারা কিছু পুরাতন চেয়ার টেবিল ভাঙেন (নতুনের আগমনে পুরাতন আসবাবগুলো ভেঙ্গে নির্বাচনের পর পিকনিক খাওয়ার জন্য আরকি)

আপনার মন কি খুব খারাপ? আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না? নিজকে নিয়ে হতাশ হতাশ লাগে? কনফিডেন্স বাড়াতে মোটিভেশন চান? তাহলে আজই চলে আসুন…

কলিকাতা হারবালে না রে ভাই! মিছিলে মিছিলে গিয়ে যেকোন প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেন, জয়ের সম্ভাবনা কত? তারপর দেখেন খেলা!

সবাই বলবে, শতভাগ। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমিই জিতব।

যাকে কেউ আজীবনে চিনেও না সেও শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। এটা থেকেও না মোটিভেট হইলে আপনার জীবনটাই বৃথা! যান, আপনি গিয়ে কলিকাতা হারবালই খান!

সবার সম্ভাবনা শতভাগ! সম্ভাবনা চ্যাপ্টারটাই ইন্টারমিডিয়েট থেকে তুলে দেওয়া উচিত রে ভাই! আর আরেকটা প্রশ্ন সবাই যদি বলে 'নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমিই জিতব' তাহলে নির্বাচনটা অসুষ্ঠু করে কে?

যাই হোক এরপর ওনারা পোস্টার ছাপান, রাস্তায় লাগান, গলিতে লাগান, দেয়ালে লাগান, বিলবোর্ডে লাগান। সবখানে লাগান। লাগান আর লাগান। লাগাতে লাগাতে ভরে ফেলেন। সূর্যও ফুটা খুজে পায় না সে কই ঢুকাবে? আরে আলোক রশ্মির কথা বললাম রে ভাই! 😐

এরপর দ্বিতীয় ধাপে আসি। এই ধাপেই শুরু হয় কানের উপর অত্যাচার। মমতাজের ফাইটা যায় থেকে শুরু করে অপরাধী রে পর্যন্ত যত গান আছে, সবগুলাই চলে! দুপুরে চলে, বিকালে চলে, রাতে চলে না, দৌড়ায়। উথাল পাথাল গান, চমকে দেয় প্রাণ! অতি সুরেলা ভোজপুরী ইন্ড্রাস্ট্রির পদ্মশ্রী প্রাপ্ত কিছু গায়ক-গায়িকা আছেন তারাই এই গুরুভার নেন আরকি। এনারা সবাই প্রতিববছর গ্র‍্যামি এওয়ার্ডে নমিনেশন পান, কিন্তু একটুর জন্যেই মিস হয়ে যায় বারবার। কিছুক্ষেত্রে শোনা যায় এ. আর. রহমান নাকি এদের টিউন কপি করছিলো।

সব প্রার্থীর গানগুলো মুখস্ত হয়ে যায় বুঝলেন, কমপক্ষে ২০০-৩০০ বার তো শোনা হয়ে যায় তো। রাতে স্বপ্নেও সেগুলো বাজতে থাকে। এখন অনেকে বলবে স্বপ্ন এগুলো বাজা কি দোষ!? না রে ভাই, দোষ না, এটা তো রহমত! আল্লাহর খাস রহমত! কাল তো নির্বাচন। কালকের পর আর গান বাজবে না। খুব মিস করবো। ভাবতেই বুকের ভেতরটা খা খা করে উঠলো। শহরটা কি ফাকা ফাকা - নির্জন লাগবে। ভাবেন তো একবার বসের সাথে কথা বলতেছি আর ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক নাই- ধুম মাচালে, ধুম মাচালে ধুম, ভোট দে রে ভোট দে রে ভোট্টট্ট! এই বেদনাতেই গানগুলো রেকর্ড করে রেখেছি। পরের ৫ বছর শুনবো। ডিপ্রেশন কেটে যাবে ইনশাল্লাহ!

এরপর তৃতীয় ধাপ। এই ধাপে প্রার্থী বাসায় আসেন। অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। তা সব ঠিক আছে কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? কিছুক্ষণ পর আরেক প্রার্থী আসেন, ওনার প্রতিশ্রুতিগুলোও হুবহু এক হয়। সবার প্রতিশ্রুতি এক, বাক্য এক, খালি বলার মানুষগুলা আলাদা! এমনটা তো স্কুলে হতো আমাদের। এক বেঞ্চের সবার Load Shedding প্যারাগ্রাফ লাইন টু লাইন এক, খালি হাতের লেখা আলাদা। ৪টা খাতা যখন স্যার দেখতেন তখন মার্কও আসতো ৪ রকম। কারণ? হাতের লেখা! নির্বাচনেও হয়তো আমাদের শ্রদ্ধেয় ভোটারগণ এভাবেই ভোট দিয়ে থাকবেন। মুখে যার হাসি, তাকেই ভালোবাসি।😎

চতুর্থ ধাপ নির্বাচনের দিনে আসে। উড়াধুরা বাশ কাটা হয় আগের দিন। কামাররা তো মনে হয় কোন ফুসরতই পায় না! কে জানে..

মারামারি না হলেও প্রস্তুতি থাকেই সব নির্বাচনে। মাঝে মধ্যে হয়ও। সেই লাগে দেখতে! হলিউড বলিউড ফেইল! কই যেন শুনছি জন উইক নাকি এখান থেকেই মারামারির মুভস কপি করছে। 

এরপর যে মার খেয়ে হারে তার ভাষ্যও প্রস্তর যুগ থেকে কেন জানি এক- এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বাশ পাতি মারামারির পর বেচে গেলে পিজাইটিং অফিসারের উপর হালকা চলে আরকি! কর্মীগণ পুরাতন প্যান্ট শার্ট দেখলে ছিড়ে দেন একটু। পিজাইটিং অফিসার আর পুরাতন ড্রেস পরবে, এ হতেই পারে না। কী জনদরদি প্রার্থী রে বাবা! এ সময় বীর পুলিশগণ ঘটনা স্থল থেকে সটকে পাশের দোকানে ফ্রি জিলাপি খান। ভাঙ্গচুর শেষ হলেই তারা যান এবং সাংবাদিকদের বলেন- পুলিশের আন্তরিক চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সবসময় এমন হয় না। মাঝে মাঝে পুলিশ সত্যিই প্রশংসনীয়ভাবে পরিস্থিতি সামলায়। No offence here.

দীর্ঘ মারামারি মারামারি খেলার পর যে জয়ী হয় সেই আসলে জয়ী হয়। জোর যার, ভোট তার 

তারপর শুরু হয় উন্নয়নের অগ্রযাত্রা…

যেগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলো লিস্ট ধরে ধরে স্কিপ করে অন্যসব কাজ করেন কেউ কেউ (সবাই নয়, অনেকে সত্যতই আদর্শবান ও যোগ্য)। যেই লোক ভোটারদের হাতে পায়ে ধরতো, সেই লোকের হাতে পায়ে ধরেও সাহায্য পান না অনেকে। কারণ? কারণ আর কি রে ভাই!? তারা এখন গদিতে। ৫ বছর নিশ্চিন্ত! আসছে নির্বাচনে আবার যাদের হাতে পায়ে ধরবেন, এখন তারা একটু হাতে পায়ে ধরুক না, ক্ষতি কি! উনি যে ভোট কিনেছেন, নির্বাচনে ৫ কোটি খসিয়েছেন, তা উসুল করতে হবে না? এই ৫ কোটি আর পরের নির্বাচনের জন্য ১০ কোটি উনি আগেই উন্নয়ন খাত থেকে আলাদা করে রাখেন, চ্যালা-চামুন্দা পোষেন তাদের দেন। আর মন খুব ভালো থাকলে আমাদের সরকারি ট্যাক্সের টাকায় কিছু রাস্তা হয়তো মেরামত করেন, কিছু বানানও বটে। তবে তা শুধুই পরের ভোটে এ করেছি, সে করেছি দেখানোর জন্য। নির্বাচনে জেতা মুখের কথা, কত্ত পরিশ্রম, কত্ত ধকল যায় সেগুলোরই পারিশ্রমিক নেন উনি। খবরদার এটাকে টাকা মারা বলেছেন তো! বলুন পারিশ্রমিক! আর আমাদের জনগণও তো খুশিই! 'ঝন্টু ভাইয়েততে ৫০০, মন্টু ভাইয়েততে ৭০০। ভোটটা হারা মন্টু ভাইকি দিমো।' 'ভোটটা দেবার সময় টাকাটাই দেখা উচিত, মাইকে চরিত্র সবার ফুলের মতোই পবিত্র হয়!' সে তো ১২০০ পেয়ে হেব্বি খুশি। কিন্তু সে জানে না তার বাড়ির সামনের ভাঙ্গা রাস্তা মেরামতের একটা অংশ তার পকেটে ঢুকলো। পরে এই ভাঙ্গা রাস্তায় পড়ে তার ভাঙ্গা পায়ের পিছনে ১২০০০ টাকা চলে যাবে! উফ! কি লাভে লাভ! ইটস ১০০% লাভ! যাই হোক এসবের মাঝেও কিছু সৎ মানুষ আছেন যাদের আসল উদ্দেশ্য সেবা করা তাদের জন্যই হয়তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত হয়েছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা শেষ করছি! 

(সৃজনশীল কল্পনাপ্রসূত লেখনী)

(কাওকে সরাসরি কটাক্ষ না করায় বাংলাদেশ সংবিধানের স্বাধীন মত প্রকাশ বিধিমালা (৩৯ তম অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী আমার লেখাটি আইনসঙ্গত। কেউ ফাসি চেয়ে লজ্জা দিবেন না)

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

রম্যরচনা হিসেবে লেখাটা বেশ বেশ বেশ ভালো হয়েছে! রম্যলেখক হিসেবে সুনাম হবে, সম্ভাবনা শতভাগ বলব না, সম্ভাবনা শতভাগ বললে আমাকে ক্ষোভের শিকার হতে হবে৷
লেখাটার বিষয়বস্তু সাধারণদের কর্ণগোচর প্লাস মস্তিষ্কগোচর হওয়া উচিত, তা কানে কোনোভাবে পৌঁছানো গেলেও খুলি পর্যন্ত তা যাবে না৷

মাইকে চরিত্র সবার ফুলের মতই পবিত্র হয়৷ হা হা হা৷
রম্যরচনা হিসেবে বেস্ট ❤️
শুভকামনা থাকলো।
সংবিধানের স্বাধীন মত প্রকাশ বিধিমালার ব্যাপারে কোনো মত নেই। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক৷

Saif বলেছেন...

বাহ দারুণ!
বাস্তবতার মিশেল!
অতিচমৎকার,স্বকীয় লেখা মুগ্ধ পাঠক😊